ঢাকা মহানগরীতে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায়, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আকস্মিক পরিদর্শন করেন এবং পুলিশের টহল কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এ পরিদর্শনের মূল উদ্দেশ্য ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা যাচাই করা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ভোরবেলা বারিধারাস্থ নিজ বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্থাপিত চেকপোস্ট এবং তল্লাশিচৌকির কার্যক্রম সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। পরিদর্শনের রুট ছিল বেশ সুপরিকল্পিত ও বিস্তৃত, যা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তিনি বনানী মোড়, বিজয় সরণি (নভোথিয়েটার), মানিক মিয়া এভিনিউ, কলাবাগান, ইডেন কলেজ হয়ে নিউমার্কেট থানা পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে নিউমার্কেট থানা থেকে শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন, মগবাজার, হাতিরঝিল, পুলিশ প্লাজা হয়ে গুলশান থানায় পৌঁছান।
এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্কতার মাত্রা, তল্লাশির পদ্ধতি, যানবাহন ও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের উপায়সহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দক্ষতা পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি আশেপাশের কিছু অলিগলিও ঘুরে দেখেন, যা মাইক্রো-লেভেলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বুঝতে সহায়তা করে।
ঢাকা মহানগরীর জননিরাপত্তা রক্ষায় চেকপোস্ট ও তল্লাশিচৌকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অপরাধ প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপগুলো কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখছে। পরিদর্শনের সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চেকপোস্টগুলোর কার্যকারিতা এবং সেগুলোর স্থাপনার কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।
বিশেষত, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপিত তল্লাশিচৌকিগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যা অপরাধ সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে সহায়ক হবে। তল্লাশি কার্যক্রম আরও বেশি কার্যকর করতে সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম এবং মোবাইল পেট্রোলিং টিমের সমন্বয়ের গুরুত্বও তিনি তুলে ধরেন।
ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার মতো মেগাসিটিতে অপরাধের ধরন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং অপরাধীরা অত্যাধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করছে। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আরও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রযুক্তি-সক্ষম হতে হবে।
তিনি বিশেষভাবে জোর দেন যে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে অপরাধের ধরণ অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজাতে হবে। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত পেট্রোলিং এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিও অপরিহার্য। ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সাধারণ জনগণের সচেতনতা ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার পরিদর্শনকালে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের পরামর্শ ও অভিযোগ শোনেন। তিনি বলেন, জনগণের তথ্য ও সহযোগিতা অপরাধ প্রতিরোধের অন্যতম মূল অস্ত্র।
নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য গণমাধ্যমের সঠিক ব্যবহার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো রোধে জনসচেতনতা তৈরির উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি, স্কুল, কলেজ ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা সচেতনতামূলক সেমিনার আয়োজনের পরামর্শ দেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই আকস্মিক পরিদর্শন ও নির্দেশনার মাধ্যমে ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। চেকপোস্ট ও তল্লাশিচৌকির কার্যকারিতা বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আরও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত করার মাধ্যমে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও সুদৃঢ় করা সম্ভব হবে।
ঢাকার মেট্রোপলিটন এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ নিয়মিত করা প্রয়োজন। জননিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং এটি ঢাকার নাগরিকদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করবে।