নিচের যে অংশটি সম্পর্কে জানতে চান, ক্লিক করুন
- ভিপিএন (VPN) কী?
- ভিপিএন কীভাবে কাজ করে?
- ভিপিএন ব্যবহার করা কি বেআইনি?
- কখন ভিপিএন দিয়ে ফেসবুক চালাবেন?
- ভিপিএনের সুবিধা এবং কেন এটি ব্যবহার করবেন?
- ভিপিএন কিভাবে চালু করবো?
- জনপ্রিয় কয়েকটি ফ্রি এবং নিরাপদ ভিপিএন এর তালিকা
- সেরা পেইড ভিপিএন এর তালিকা
- ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করা কি নিরাপদ?
বর্তমান ইন্টারনেট জগতে ভিপিএন অত্যন্ত পরিচিত একটি শব্দ। অনলাইনে ব্যাক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা, নিরাপত্তা বাড়ানো এবং নির্দিষ্ট দেশে সীমাবদ্ধ সাইট ও এর কন্টেন্টের অ্যাক্সেস পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ টুল হয়ে উঠেছে ভিপিএন। বিশ্বব্যাপী ভিপিএনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে ভিপিএন ব্যবহারের আগে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।
ভিপিএন (VPN) কী?
ভিপিএন এর পূর্ণরূপ হলো ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Virtual Private Network)। ভিপিএন ইন্টারনেটের একটি ভার্চুয়াল ‘টানেল’ যার মাধ্যমে ডাটা কম্পিউটার থেকে আদান প্রদান করতে পারে। অর্থাৎ ভিপিএন হচ্ছে এমন এক কাল্পনিক প্রাইভেট নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে নিরাপদে তথ্য আদান প্রদান করা হয়। নিরাপদ যোগাযোগ এবং ডাটা এনক্রিপ্ট করার একটি পদ্ধতি হিসেবে এটি কাজে লাগে। এই ভার্চুয়াল কাল্পনিক টানেলটির মাধ্যমে একটি ভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত প্রাইভেট নেটওয়ার্ক এর সাথে ডিভাইসকে সংযুক্ত করা সম্ভব৷ ফলে কোন পাবলিক নেটওয়ার্ক এর আওতাধীন থেকেও ইন্টারনেট ব্যবহারকালীন কোন প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহারের যেসকল সুবিধা পাওয়া যায়, সেসকল সুবিধা পাওয়া সম্ভব।
ভিপিএন কীভাবে কাজ করে?
ভিপিএন দিয়ে একটি কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা মোবাইলকে যখন সংযোগ করা হয় তখন ডিভাইসটি ভিপিএন সার্ভারের সাথে কানেক্ট হয়ে যায় এবং ভার্চুয়ালি একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করে যেটি শুধুমাত্র ঐ ডিভাইসের জন্যই। মূলত এই কারণেই একে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলা হয়। প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একটি নিজস্ব আইপি এড্রেস (IP Address) থাকে, যার দ্বারা তাকে আলাদাভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। কিন্তু ভিপিএন ব্যবহারের ফলে ব্যবহারকারীর আইপি এড্রেস দ্বারা আর তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়না। কারণ ভিপিএন এই আইপি এড্রেসটি বদলে দেয়। এতে ব্যবহারকারীর আসল অবস্থান লুকিয়ে রেখে যে দেশের সার্ভারে কানেক্ট করা হয় ওই দেশের লোকেশন দেখানো যায়। ফলে, ভিপিএন চালু রাখা ডিভাইসটির আসল পরিচয় বা অবস্থান নির্ধারণ করা সাধারণত অসম্ভব।
ভিপিএন ব্যবহার করা কি বেআইনি?
ভিপিএন ব্যবহার করা বেআইনি কিছু নয়। কারণ ভিপিএন ইউজারের ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা গোপনীয়তা বজায় রাখার একটি উপায় মাত্র। বিশ্বের সকল মানুষের নিজের ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা গোপনীয়তা বজায় রাখার অধিকার রয়েছে। তবে কেউ যদি ভিপিএন ব্যবহার করে কোনো অবৈধ কাজ করে থাকে তাহলে সেটা বেআইনি।
কখন ভিপিএন দিয়ে ফেসবুক চালাবেন?
ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক ব্লককৃত ওয়েবসাইট চালানো যায়। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার কয়েক দফায় ফেসবুক সহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্লক করে দেয়। এমতাবস্থায় ভিপিএন দিয়ে এসকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা যায়।
ভিপিএনের সুবিধা এবং কেন এটি ব্যবহার করবেন?
ভিপিএন ব্যবহার করার উদ্দেশ্যই হলো আপনি আপনার তথ্য নিরাপদে আদান প্রদান করতে পারছেন। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার সংক্ষেপে আইএসপি, যাদের কাছে ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং বা সার্ফিং তথ্যের সবকিছুতেই অ্যাক্সেস থাকে। গ্রাহক হবার ফলে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীকে ব্যক্তিগতভাবেও চিহ্নিত করতে পারে। ভিপিএন ব্যবহারের ফলে ইউজারের ইন্টারনেট কানেকশন এনক্রিপটেড থাকে। অর্থাৎ আপনার সমস্ত তথ্য এমন একটা কোডে রূপান্তরিত হবে, যা বিশেষ অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ ডিক্রিপ্ট করে দেখতে পাবে না। এতে হ্যাকার, সরকারি সংস্থা এমনকি আইএসপি আপনার তথ্য মনিটর করতে পারবে না। এছাড়াও ব্যবহারকারীর পরিচয় থাকবে অ্যানোনিমাস বা অজ্ঞাত। ফলে আপনার ভৌগলিক অবস্থান ও আইপি অ্যাড্রেস গোপন থাকবে। এছাড়াও কোনো ওয়েবসাইট যদি আইএসপি অথবা কোনো দেশ ব্লক করে রাখে সেক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করে অনায়েসেই সেসকল ওয়েবসাইট ভিজিট করা যায়। এছাড়া অনেক অফিসিয়াল কাজেও ভিপিএন ব্যবহার করা যায়। অনেক গুরুত্বপুর্ন কাজ ভিপিএন দিয়ে করলে হ্যাকারের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
ভিপিএন কিভাবে চালু করবো?
বর্তমানে ফ্রী ভিপিএন সফটওয়্যারের অভাব নেই এবং বেশিরভাগ ভিপিএন সার্ভিস নিতে হলে ভিপিএন ওয়েবসাইটগুলোতে একটি একাউন্ট খুলে নিতে হয়। এর পরে রেজিস্টার্ড সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে ইন্সটল (vpn install) করলেই হয়ে যায়। এছাড়া স্মার্টফোনে ভিপিএন সফটওয়্যার ডাউনলোড করার পরেও একাউন্ট খোলা যায়। আবার কিছু কিছু ভিপিএন সফটওয়্যারে ফ্রি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ধরণের একাউন্ট তৈরী করার ঝামেলাও থাকে না। সাধারণত ফ্রী ভিপিএন সফটওয়্যারে সব দেশের সার্ভার থাকে না।
এছাড়াও কিছু ভিপিএনএ একটি নির্দিষ্ট পরিমান ব্যান্ডউইথ ফ্রিতে ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে থাকে। পরবর্তীতে ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজে প্রিমিয়াম সাবক্রিপশন কিনে ব্যবহার করতে হয়। প্রিমিয়াম ভিপিএন-এ সুবিধা হলো তাদের কানেকশন প্রসেস আরো বেশি সিকিউর এবং প্রায় সব দেশের সার্ভারে কানেক্ট হওয়া যায়। এছাড়াও পেইড ভিপিএনগুলো আপনাকে সর্বোচ্চ পরিমাণে ইন্টারনেট সিকিউরিটি দিতে সক্ষম এবং কানেকশন স্পিডও অনেক দ্রুত হয়ে থাকে।
জনপ্রিয় কয়েকটি ফ্রি (Best vpn service) এবং নিরাপদ ভিপিএন এর তালিকা
নিচে কয়েকটি ফ্রি ও নিরাপদ ভিপিএন অ্যাপসের নাম ও এদের বর্ণনা দেয়া হলো-
উইন্ডস্ক্রাইব ভিপিএন ( Windscribe VPN )
বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য উইন্ডস্ক্রাইব অন্যতম সেরা একটি ভিপিএন। এই ভিপিএনে একাউন্ট খোলার সময়ে নিজের ইমেইল অথবা Temporary মেইল দিয়ে ভেরিফাই করলে ফ্রীতে ১০ GB ডাটা ব্যবহার করতে পারবেন। উইন্ডস্ক্রাইব ভিপিএনের অন্যতম সুবিধাটি হলো সফটওয়্যারটিতে কোনো ধরণের বিজ্ঞাপন দেখানো হয় না। এছাড়া প্রিমিয়াম সাবক্রিপশনের মাধ্যমে বিশ্বের ৬৯ টি দেশের ১৩৪ টি শহরের ভিপিএন সার্ভার ব্যবহার করা যায়।
ডাউনলোড লিংক- PC (Computer) | Android
প্রোটন ভিপিএন ( Proton VPN)
বর্তমান সময়ে বিনামূল্যে ব্যবহার করার জন্যে প্রোটন ভিপিএন অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ভিপিএন। প্লে-স্টোরে এই ভিপিএনটি ১০ মিলিয়নের বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে। একাউন্ট খোলার ঝামেলা ছাড়াই গেস্ট মোডে ফ্রীতে কয়েকটি দেশের সার্ভার ব্যবহার করা যায়। সকল দেশের সার্ভারসহ প্রিমিয়াম ফিচার গুলো পেতে আপনাকে প্রিমিয়াম সাবক্রিপশন নিতে হবে। প্রোটন ভিপিএনে রয়েছে বিশ্বের ১০০+ দেশের ৬২০০ টি সার্ভার।
ডাউনলোড লিংক- PC (Computer) | Android
হটস্পট শিল্ড ভিপিএন ( Hotspot Shield VPN )
হটস্পট শিল্ড হলো বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য অন্যতম একটি জনপ্রিয় ভিপিএন। প্লে-স্টোরে এই ভিপিএনটি ১০০ মিলিয়নেরও বেশি বার ডাউনলোড হয়েছে। বিনামূল্যে এই ভিপিএন ব্যবহার করলে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভার ব্যবহার করা যায় এবং স্পিড লিমিট করা থাকে। প্রিমিয়াম সাবক্রিপশনে প্রায় ৮০টি দেশে ১৮০০+ বেশি সার্ভার রয়েছে। হটস্পট শিল্ড নিরাপত্তার দিক দিয়ে অনেক দৃঢ়, আবার ব্যবহারকারী খুব সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারবে।
ডাউনলোড লিংক- PC (Computer) | Android
টানেলবিয়ার ভিপিএন ( TunnelBear VPN )
বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য টানেলবিয়ার ভিপিএনের ২০টি সার্ভার রয়েছে। তবে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশনে বিশ্বের ৪৬+ দেশের ৫০০ টি সার্ভার রয়েছে। সহজ সরল স্ট্রাকচারের কারণে এটি ব্যবহার করাও খুব সহজ। এছাড়াও টানেলবিয়ার ভিপিএন নিরাপত্তার দিক দিয়ে অনেক দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
ডাউনলোড লিংক- PC (Computer) | Android
প্রিভাডো ভিপিএন ( Privado VPN )
জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে প্রিভাডো ভিপিএন অন্যতম। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এর আনলিমিটেড স্পিড। বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য মাত্র ৯টি সার্ভার উন্মুক্ত রয়েছে প্রিভাডোর। তবে প্রিমিয়াম ভার্শনে রয়েছে ৪৫ টি দেশের ৬৬ টি সার্ভার। বিনামূল্যে ব্যাবহারকারীদের ৩০ দিনের জন্য ১০ GB ডাটা বরাদ্দ থাকে। তবে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশনে আনলিমিটেড ডাটা ব্যবহার করা যায়।
ডাউনলোড লিংক- PC (Computer) | Android
টার্বো ভিপিএন ( Turbo VPN)
বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য টার্বো অন্যতম সেরা একটি ভিপিএন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ টার্বো ভিপিএন লাইট ভার্শনটি। প্রিমিয়াম ভার্শনে বিশ্বের ১১১ জায়গায় প্রায় ২১০০০ সার্ভার বিদ্যমান রয়েছে। প্লে-স্টোরে এটি ১০০ মিলিয়নেরও বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে।
ডাউনলোড লিংক- PC (Computer) | Android , Turbo VPN lite
এছাড়াও আরো কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রি ভিপিএনের নাম গুলো হলো : ১.১.১.১ ভিপিএন( warp 1.1 1.1 ), সুপার ভিপিএন(Super VPN), রেডমিন ভিপিএন(Radmin VPN ), অ্যাটলাস ভিপিএন(Atlas VPN ) ইত্যাদি।
সেরা পেইড ভিপিএন (best paid vpn service) এর তালিকা
পেইড ভিপিএন গুলোর মধ্যে সেরা কয়েকটি ভিপিএন এর তালিকা নিচে দেয়া হলো:
- অ্যাস্ট্রিল ভিপিএন (Astrillvpn)
- ওয়্যারগার্ড ভিপিএন (Wireguard vpn)
- সার্ফ শার্ক ভিপিএন (Surf shark vpn)
- নেমচিপ ভিপিএন (Namecheap vpn)
- বিটডিফেন্ডার ভিপিএন (Bitdefender vpn)
- হট শিল্ড ভিপিএন (Hot shield vpn)
- ক্লাউড ভিপিএন (Cloud vpn)
- এভিজি সিকিউর ভিপিএন (AVG secure vpn)
- এক্সপ্রেস ভিপিএন (Vpn Express)
- ইজি ভিপিএন (Easy Vpn)
- ব্রাইট ভিপিএন (Bright vpn)
- ব্রেভ ভিপিএন (Brave vpn)
- নর্ড ভিপিএন (Nord vpn)
- আইপি ভ্যানিশ ভিপিএন (ipvanish vpn)
- ওপেন ভিপিএন (Open vpn)
- হাইড মাই এস ভিপিএন (hidemyass vpn or HMA vpn)
- পিওর ভিপিএন (Pure vpn)
- ক্যাসপারস্কি ভিপিএন (Kaspersky vpn)
ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করা কি নিরাপদ?
ফ্রি ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো তথ্য চুরির আশঙ্কা রয়েছে। ২০১৯ সালে গুগল প্লে স্টোরের ১৫০টি জনপ্রিয় ভিপিএনের ২৫ শতাংশের বেশি অ্যাপের বিরুদ্ধে তথ্য বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছিল। এ সকল ভিপিএন অ্যাপসগুলো থার্ড পার্টি ট্র্যাকিং টুল ব্যবহার করে ইউজারের তথ্য চুরি করে।