মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পদ্ধতি

By MD Alim

Updated on:

প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একটি নিদিষ্ট সময় পর পর রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গনতন্ত্র ও পরাশক্তির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশ-বিদেশে সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ ও কৌতূহলের শেষ নেই। স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ভোটের মাধ্যমে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পদ্ধতি অন্যান্য দেশের নির্বাচন পদ্ধতি থেকে কিছুটা জটিল ও দুর্বোধ্য। নিচে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো-

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটদান পদ্ধতি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনের সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হচ্ছে পোস্ট সিস্টেম। অর্থ্যৎ সর্বাধিক ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই। এই পদ্ধতিতে কোন প্রার্থী যদি জেতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট পায় ও দুই প্রার্থীর মধ্যে সর্বাধিক ভোট যার রয়েছে সে নির্বাচিত হবে।
জানা যায়, ২০০২ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহর ইনস্ট্যান্ট-রানফো ভোট পদ্ধতি গ্রহণ করে। এই পদ্ধতিতে ভোটারগণ একজন প্রার্থীকে ভোট দেবার পরিবর্তে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রার্থীকে রেঙ্ক করে। সেখানে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থী বাদ দেওয়া হয়। যে প্রার্থীকে বাদ দেয়া হয়েছে তার জন্য ব্যালটগুলি পুনর্নির্মিত করা হয় এবং বাকী প্রার্থীদের জন্য এগুলো বরাদ্দ করে আবারো রেংকিং প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ একজন প্রার্থী অর্ধেকেরও বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। ২০১৬ সালের পর ফেডারেল নির্বাচন এবং রাষ্ট্রীয় প্রাইমারিগুলির জন্য এটি ব্যবহার শুরু হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারের যোগ্যতা

ভোটার হবার জন্য যে যে যোগত্যা প্রয়োজন তা মার্কিন সংবিধান কতৃক নির্ধারিত রয়েছে। যেমন সংবিধান বলে, জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে ১৮ বা তার উর্দ্ধের বয়সের যেকোন মার্কিন নাগরিক ভোট দেয়ার অধিকার রাখে। তবে বিশেষ কোন কারণে রাষ্ট্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বা অনির্দিষ্টকালের জন্য ভোটারের এই অধিকার নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচন কিভাবে কাজ করে?

ফেডারেল নির্বাচন হলো যে প্রক্রিয়ায় দেশের নাগরিকরা সরকারের জন্য প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচন সাধারণত নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। তবে নভেম্বরের ১ তারিখ যদি মঙ্গলবার হয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচন হবে নভেম্বরের দ্বিতীয় মঙ্গলবারে। ফেডারেল নির্বাচনে নাগরিকরা প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেসের সদস্য (হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ও সেনেটর) এবং অন্যান্য ফেডারেল পদের জন্য ভোট দেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার পরিচালনার অংশ হিসেবে কাজ করে এবং জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে।

ফেডারেল নির্বাচনে- 
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা মার্কিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের মেয়াদ মাত্র দুই বছরের। তাই তারা প্রতি দুই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাঝখানে আরেকবার জনগণের ম্যান্ডেট নিতে বাধ্য। ওই নির্বাচনকে বলে মিডটার্ম ইলেকশন (Midterm Election)।
মার্কিন সিনেটরদের মেয়াদ ছয় বছরের, তবে তাদের মেয়াদ পালাক্রমে এমনভাবে বিন্যাস করা যে, প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর কিছু না কিছু সিনেটরকে ছয় বছর পূর্ণ করে নির্বাচনের মাঠে নামতে হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের শাসনকালের মেয়াদ মাত্র চার বছরের এবং তিনি পরপর দুই টার্মের বেশি প্রার্থী হতে পারেন না।

১। রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন :

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন একটি পরোক্ষ নির্বাচন যা প্রতি ৪ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা মূলত দুইটি প্রধান ধাপে বিভক্ত:

ধাপ ১: প্রাথমিক নির্বাচন এবং ককাস

নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায়ে, প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী নির্বাচন করতে বিভিন্ন প্রদেশে প্রাথমিক নির্বাচন (primary election) বা ককাস (caucus) আয়োজন করে। এই পর্যায়ে, প্রার্থী নির্বাচনের জন্য প্রাদেশিক বা স্টেট ভিত্তিক ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন।

ধাপ ২: ইলেকটোরাল কলেজ নির্বাচন

প্রাথমিক নির্বাচন এবং ককাসের পর, রাজনৈতিক দলগুলি তাদের প্রাথমিক নির্বাচিত প্রার্থীকে দলের সম্মেলনে (national convention) আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত করে। এর পর, সাধারণ নির্বাচনের দিন ভোটাররা তাদের নির্বাচিত প্রার্থীকে ভোট দেয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয় না।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সঠিকভাবে নির্বাচিত হতে হলে, প্রার্থীদের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে এবং রাষ্ট্রপতি হতে হলে প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট প্রয়োজন। প্রতিটি প্রদেশের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট থাকে, যা জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। ভোটাররা সাধারণ নির্বাচনে তাদের ভোট দেন, কিন্তু মূলত ইলেকটোরাল কলেজের প্রতিনিধিরা (electors) তাদের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রার্থী যদি ইলেকটোরাল কলেজে ২৭০ ভোট বা তার অধিক পান, তাহলে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।

২। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নির্বাচন

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা মার্কিন সরকারের আইন প্রণয়নের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দুটি অংশে বিভক্ত: সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস। কংগ্রেসের নির্বাচন প্রক্রিয়া এই দুই অংশের নির্বাচনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

১. সিনেট নির্বাচন

সিনেটের গঠন: যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে মোট ১০০টি সদস্য থাকে, যাদের প্রত্যেকে ৬ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন। প্রতিটি রাজ্য থেকে দুইজন সিনেটর নির্বাচিত হন, এমনকি রাজ্যের জনসংখ্যা ভিন্ন হলেও।
নির্বাচন প্রক্রিয়া: সিনেটের নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী সাইকেল প্রতি দুই বছর পর পর ঘটে, যেখানে ৩৩ বা ৩৪টি আসনের নির্বাচন হয়। এর মানে, প্রতিটি সিনেটর প্রতি ৬ বছরে একবার পুনরায় নির্বাচন করতে হয়, তবে সব সিনেটর একসাথে নির্বাচন করেন না।

২. হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস নির্বাচন

হাউসের গঠন: হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে মোট ৪৩৫টি সদস্য থাকে, যারা ২ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন। সদস্যদের সংখ্যা প্রতিটি রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।

নির্বাচন প্রক্রিয়া: হাউসের নির্বাচনের জন্য সমস্ত আসন প্রতি দুই বছর পর পর নির্বাচন হয়। এটি একটি পুরোপুরি নতুন নির্বাচন প্রতি দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হয় এবং সমস্ত ৪৩৫টি আসনের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয়।

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস নির্বাচন পদ্ধতি

প্রাথমিক নির্বাচন : কংগ্রেস সদস্য নির্বাচনের জন্য প্রথমে প্রার্থী নির্বাচন করতে প্রাথমিক নির্বাচন বা ককাস অনুষ্ঠিত হয়। এটি সাধারণত নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে।

সাধারণ নির্বাচন: প্রাথমিক নির্বাচনের পর, সাধারণ নির্বাচনে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। ভোটের দিন সাধারণত নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার হয়ে থাকে, কিন্তু এটি বিভিন্ন রাজ্যের ভিন্ন সময়েও হতে পারে।

নির্বাচনের ফলাফল: সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থী পদে বসার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট পেয়ে থাকলে তিনি নির্বাচিত হন।

Leave a Comment