- ভূমিকা
- হঠাৎ বমি হওয়ার সম্ভাব্য কারণ কী?
- হঠাৎ বমি হলে কী খাবার খাবেন? (What to eat in sudden Vomit?)
- হঠাৎ বমি হলে কী কী খাবার এড়িয়ে চলবো? (What food to avoid after vomit)
- হঠাৎ বমি হলে ঘরোয়া চিকিৎসা কী?
- বমির পর যা করা উচিৎ (After vomiting what to do)
- গর্ভাবস্থায় বমি হলে কী করবো?
- বমির আগে বমি বমি ভাব হলে কী করবো?
- বমির সাথে ডায়রিয়া হলে কী করা উচিত?
- বমির জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
ভূমিকা
আমরা সবাই জীবনের কোন না কোন সময় হঠাৎ বমির সম্মুখীন হয়েছি। বমি বমি ভাব হওয়া খুবই সাধারণ। এটি যেকোন মানুষেরই হতে পারে। সাধারণত এসিড রিফ্লাক্স বা অতি সাধারণ কোন কারণ থেকে শুরু করে বড় কোনো অসুস্থতার প্রাথমিক সংকেত হিসেবেও বমি হতে পারে। বমি যে কেবল অস্বস্তিকর একটি অনুভূতি তৈরি করে তা শুধু নয়। সচেতন না হলে পরবর্তী বড় অসুস্থতার পূর্বলক্ষণও হতে পারে এই হঠাৎ বমি। চলুন আজকে হঠাৎ বমি হওয়ার সম্ভাব্য কারণ, হঠাৎ বমি হলে কী খাবার খাবেন এবং কী কী খাবার এড়িয়ে চলবেন, হঠাৎ বমির ঘরোয়া চিকিৎসা ও এর প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
হঠাৎ বমি হওয়ার সম্ভাব্য কারণ কী?
হঠাৎ বমি হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। তবে এগুলোর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে যা সহজেই নির্ণয় করা যায় এবং সহজেই এর থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। নিচে কারণ এই সমূহ বিস্তারিত দেয়া হলো।
- ফুড পয়জনিং (Food poisoning) : ফুড পয়জনিংকে বাংলায় খাদ্য বিষক্রিয়া বলা হয়। যখন দূষিত, বিষাক্ত ও জীবাণুযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে অসুস্থতা দেখা দেয় তখন তাকে ফুড পয়জনিং বলে। এখানে বিষ বলতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী বা তাদের দ্বারা উৎপাদিত বিষকে বুঝানো হয়ে থাকে। তবে উল্লেখ্য যে, ফুড পয়জনিংয়ে বমির সাথে ডায়রিয়াও থাকতে পারে।
- গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস(Gastroenteritis) : এটি মূলত পেটের সংক্রমণ রোগ। যখন পরিপাকতন্ত্রে খাবার বা পানির মাধ্যমে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী প্রবেশ করে তখন গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধরা হয়। গ্যস্ট্রোএন্টারাইটিসের প্রাথমিক লক্ষণই হলো বমি।
- মোশন সিকনেস (Motion Sickness) : বিশেষ কিছু মানুষের এই সমস্যা আছে । এটি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। সাধারণত যারা কোন বিশেষ যানবাহনে উঠলে মাথা ঘুরানো বা পেটে অস্থিরতা অনুভব করে তারাই এর অন্তভুক্ত। এটি কোন রোগ নয় বরং সময়ের সাথে সাথে এগুলো ঠিক হয়ে যায়। এই সমস্যার ব্যাক্তিদের যানবাহনে উঠলে বমি হয়ে থাকে।
- গর্ভাবস্থা ও মাইগ্রেন (Pregnancy & Migraine) : গর্ভাবস্থার প্রাথমিক দিকে বমি বমি ভাব হয়ে থাকে। পাশাপাশি ক্ষুদামন্দা ও আরো জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে এগুলোর সবই স্বাভাবিক। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি চললে এতে ভয়ের কোন কারণ নেই। দীর্ঘক্ষণ মাইগ্রেন জনিত মাথাব্যাথা থাকলে এর প্রভাবে বমি হতে পারে। এক্ষেত্রেও ডাক্তারের শ্বরণাপন্ন হতে হবে।
- অ্যাসিডিটির সমস্যা (Acidity Problem): অ্যাসিডিটির সমস্যা হলো যখন পাকস্থলি থেকে অতিরিক্তি হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয় এবং তা পেটে অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। বাহিরের অতিরিক্ত ভাজা খাবার বা পুরোনো খাবার এর জন্য দায়ী হতে পারে। এর কারণে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
- ফ্লু বা এ জাতীয় কোনো ইনফেকশন (Flu or Infection): এক্ষেত্রে বমির পূর্বে জ্বর বা শরীর গরম থাকতে পারে। পাশাপাশি আরো কিছু লক্ষণ যেমন: মাথা ব্যাথা, শরীর চুলকানো ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের শ্বরণাপন্ন হতে হবে।
এগুেলোর পাশাপাশি আরো কিছু কারণ রয়েছে যেমন : সম্প্রতি সার্জারি হওয়া, অতিরিক্ত ঔষধ সেবন ও মদ্যপান ইত্যাদি।
হঠাৎ বমি হলে কী খাবার খাবেন? (What to eat in sudden Vomit?)
সাধারণ কারণে যদি বমি হয়ে থাকে তাহলে তা ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন বা কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমেই সারিয়ে তোলা যায়। তবে পরিস্থিতি যদি খারাপ হতে থাকে যেমন : রক্ত বমি হওয়া, বমির পরপরই মাথা ঘুরিয়ে পরে যাওয়া ইত্যাদি তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নিচে হঠাৎ বমি হলে কী কী খাবার খাবেন তা নিয়ে বিস্তারিত দেওয়া হলো।
পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার : হঠাৎ বমির পরপরই পেটের হজম ক্ষমতা ও পানির মাত্রা কমে যায়। পেটে থাকা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মাত্রাও কমে যায়। এক্ষেত্রে বমির পর ৩টি কাজ করতে পারে।
- প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি পান করা।
- ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানিয় যেমন: সেলাইন বা রেডিমেট ইলেকট্রোলাইট জুস পান করা।
- তরল খাবার যেমন : স্যুপ, ডাবের পানি, গ্লুকোজ পানি ও ভাতের মার খাওয়া।
ফলমূল : বমি নিয়ন্ত্রনে আসার পর ফলমূল বা ফলে জুস হঠাৎ বমির ধকল কাটিয়ে উঠার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ফলমূল দ্রুত শরীর সুস্থ ও তাৎক্ষণিক শক্তি দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে
- মিষ্টি কমলার জুস
- পেঁপেঁ
- আপেল
- কলা
ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। তবে ফলের ক্ষেত্রে তা যেন ফরমালিন মুক্ত হয় তা খেয়াল রাখতে হবে।
জাউ বা খিচুড়ি : তরল খাবারের পর যদি একটু সুস্থ বোধ করে তাহলে আরেকটু শক্ত খাবারের মধ্যে জাউ বা খিচুড়ি দেয়া যেতে পারে। শাক-সবজি দিয়ে তরল খিচুড়ি এক্ষেত্রে ভালো হয়। পেটে এসিড কম থাকায় এগুলো সহজে হজম হয়।
সবজি ও স্যুপ: হালকা খাবারের মধ্যে আরো রয়েছে সবজি ও রেডিমেট স্যুপ। এগুলো সহজে পেট হজম করতে পারে। পাশাপাশি তেল বা মসলা ছাড়া সেদ্ধ আলুও পুষ্টি জোগায়।
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার: নরম ও হালকা প্রোবায়োটিক খাবার পাকস্থলির স্বাস্থ ঠিক রাখতে সাহায্যে করে। তাই বমির পর দই বা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে আগে ডাক্তারের মতামত আবশ্যক।
হঠাৎ বমি হলে কী কী খাবার এড়িয়ে চলবো? (What food to avoid after vomit)
বমির পর স্ব্যাস্থকর খাবার খাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি স্বাস্থ ঠিক রাখতে বমির পর কিছু খাবার এড়িয়ে চলাও আবশ্যক। নিচে সেসকল খাবারের তালিকা দেয়া হলো।
- ঝাল, বেশি মশলাযুক্ত বা তেলযুক্ত খাবার
- ক্যাফেইন যেমন: চা, কফি
- অ্যালকোহল
- খুব বেশি মিষ্টি বা টক জাতীয় খাবার
হঠাৎ বমি হলে ঘরোয়া চিকিৎসা কী?
হঠাৎ বমি হলে তাৎক্ষণিক কিছু ঘরোয়া উপায়ে বমি বমি ভাব কমানো ও বমির পরবর্তি স্বাস্থ্যর উন্নতি করা যায়। নিচে এরকম কিছু উপায় বর্ণনা করা হলো।
- আদা ও লেবু ব্যবহার : আদা ও লেবু দিয়ে আলাদা আলাদা বা একত্রে চা বানিয়ে পান করলে তা বমি বমি ভাব কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তা সম্ভব না হলে কাঁচা আদা চিবিয়ে রস খেলেও একই ফল পাওয়া যায়। তবে উপরের কোনটাই সম্ভব না হলে লেবু দিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারে তবে এক্ষেত্রে শরবতে কোন প্রকার বাহিরের মিশ্রণ যেমন : টেং বা অন্যান্য কিছু যুক্ত করা যাবেনা।
- ঔষধি পাতার ব্যবহার : বমির পর পাকস্থলি শান্ত করতে ঘরের আশে-পাশে লাগানো তুলশি পাতা অথবা ফ্রিজে রাখা পুদিনা পাতা চিবুতে পারেন। এক্ষেত্রে যদি ব্যাক্তি তা করতে অক্ষম হয় তাহলে পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে তা পান করতে পারেন। এক্ষেত্রে পাতাগুলো আলাদা আলাদা পাত্রে গরম করে পান করবেন।
- জিরা ও দারুচিনি : পাতার মতো জিরা ও দারুচিনিও ব্যবহার করা যায়। গরম পানিতে ফুটিয়ে হালকা গরম অবস্থায় পান করলে ভলো ফল পাওয়া যায়।
- স্যালাইন (ORS) বা লবণ-চিনি মিশ্রিত পানি: বমির পরপরই শরীরে পানিশূন্যতা পূরণ করতে অল্প পরিমাণে স্যালাইন মিশ্রিত পানি পান করা ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে স্যালাইন পরিমান মতো পানিতে মিশ্রণ করা হয় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি স্যালাইন না থাকে তাহলে এক চিমটি লবণ ও দুই চা চামচ চিনি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করা যায়।
বমির পর যা করা উচিৎ (After vomiting what to do)
বমির পর নিচের কাজগুলো করতে পারেন :
- বিশ্রাম নেয়া ও তরল খাবার সমূহ ধীরে ধীরে খাওয়া।
- পানি পান করার পর সাথে সাথে খাবার না খাওয়া। একটু অপেক্ষা করে তারপর খাওয়া।
- সর্বাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শে থাকা।
উল্লেখ্য যে যদি রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়। তাহলে বাড়িতে না রেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। প্রাথমিক ভাবে সাথে খাবার স্যালাইন মিশ্রিত পানি ও নরমাল পানি রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় বমি (Vomiting during pregnancy) হলে কী করবো?
গর্ভাবস্থায় বমি একটি সাধারণ বিষয়। তবে যদি বমির মাত্রা বাড়তে থাকে তাহলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। যদি মর্নিং সিকনেস দেখা দেয় তাহলে পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করুন যেমন: পেপে, কলা, স্যুপ ইত্যাদি। তবে সর্বপরি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী চলতে হবে।
বমির আগে বমি বমি ভাব হলে কী করবো?
বমি বমি ভাব লেগে বমি হবে এমন মনে হলে তাৎক্ষণিক আদা চা, পুদিনা চা অথবা লেবুর রস পান করতে পারেন। পাশাপাশি নাড়াচাড়া না করে বিশ্রাম নেয়া জরুরি। এর পরেও যদি বমি বমি ভাব হয় তাহলে অল্প অল্প করে পরিষ্কার পানি পান করতে থাকা যতক্ষণ পর্যন্ত বমি বমি ভাব না কাটে।
বমির সাথে ডায়রিয়া হলে কী করা উচিত?
বমির সাথে ডায়রিয়া থাকলে এতে প্রচুর পরিমানে তরল পদার্থ শরীর থেকে দ্রুত বের হয়ে যায় ফলে শরীর ভেঙে পড়ে। এক্ষেত্রে বমি কমলে যতটুকু পারা যায় স্যালাইন মেশানো পানি অথবা ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানি পান করা। তবে এক্ষেত্রে ডাবের পানিও অনেক কার্যকরি। পানির পর তরল খাবার খেতে হবে।
বমির জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
যদি বমি দির্ঘস্থায়ী হয় অথবা বমির মাত্রা বাড়তে থাকে বা বমির সাথে রক্ত আসে অথবা বমির সাথে পেটব্যাথা কিংবা ডিহেইড্রেশন দেখা দেয় তখন দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া উচিত।