নিচের যে অংশটি সম্পর্কে জানতে চান, ক্লিক করুন
- আয়রন কী?
- আয়রন কত প্রকার?
- মানবদেহে আয়রনের গুরুত্ব
- আয়রণ সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা
- আয়রনের অভাবজনিত রোগ
- মানবদেহে আয়রনের ঘাটতির লক্ষণ সমূহ
- মানবদেহে আয়রনের দৈনিক চাহিদ কতটুকু?
- বাচ্চাদের জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা (Iron Rich Foods for Infants)
আয়রন বা Iron (Fe) কী?
আয়রন বা লৌহ একদিকে যেমন একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান অন্যদিকে এটি মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ। আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকার ৬ টি উপাদানের মধ্যে একটি উপাদান হলো হলো খনিজ। আর আয়রন হলো এই খনিজ উপাদানের মূল। আয়রন আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন ও মায়োগ্লোবিন তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে থাকে।
আয়রন কত প্রকার?
আয়রনের উৎস অনুসারে আয়রনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা :
- Heme Iron ও
- Non-Heme Iron
হিম আয়রন (Heme Iron): এটি খাবারের প্রাণিজ উৎস থেকে আসে। যেমন মাংস, মাছ,লাল মাংস, অর্গান মিট ও শেলফিশ। এটি শরীর দ্বারা সহজে শোষিত হয় এবং দ্রুত কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
নন-হিম আয়রন (Non-Heme Iron): এটি খাবারের উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আসে। এটি হিম আয়রনের তুলনায় সহজভাবে শোষিত হয়। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার নন-হিম আয়রনের শোষণ বৃদ্ধি করে।
মানবদেহে আয়রনের গুরুত্ব
আমাদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে হিমোগ্লোবিন। আর আয়রন এই হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়ক তাই কোন কারণে দেহে আয়রনের ঘাটতি হলে হিমোগ্লোবিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়। ফলসরূপ দেহ পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়না। আমাদের দেহের আয়রনের ৭০ ভাগই থাকে হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে। আর বাকিটুকু থাকে প্রোটিন, ট্রান্সফেরিন বা অস্থিমজ্জার ফেরিটিন ইত্যাদির সঙ্গে। ফলে কোষের শক্তি উৎপাদন ও শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী প্রক্রিয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এটি মস্তিষ্কের বিকাশ এবং সঠিক কার্যকারিতায় সহায়তা করে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ও মেজাজ খিটখিটের প্রধান কারণ হচ্ছে আয়রনের ঘাটতি। ফলে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে আয়রন একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
আয়রণ সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা
আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে একটি অপরিহার্য উপাদান। আর এই হিমোগ্লোবিন থাকে লোহিত রক্তকণিকায়। আর মানবদেহের এই লোহিত রক্তকণিকা গড়ে ১২০ দিনের মতো বাঁচে। তারপর নতুন লোহিত কণিকা তৈরি হয়। অন্যদিকে আমাদের দেহ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১-২ মি.গ্রা.আয়রন মল, মূত্র ও ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। তারপর নারীদের প্রতি মাসিকে রক্তক্ষরণে প্রায় ৪০-৮০ মি.লি আয়রন দেহ থেকে বের হয়ে যায়। অন্যদিকে একজন গর্ভধারিনী মা প্রতিটি গর্ভধারণে ৬০০-৯০০ মি.গ্রা আয়রণ ঘাটতিতে ভোগে।
এতএব, এখান থেকে বলা যায় যে, আমদের দৈনিক খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত আয়রন থাকা অতিগুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় নানান শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। নিচে আয়রন সমৃদ্ধ পরিচিত কিছু খাবারের তলিকা দেয়া হলো।
আয়রন সমৃদ্ধ ফল ও সবজির তালিকা :
আপেল | কিশমিশ |
আনারস | পালং শাক, মুলা শাক |
তরমুজ | ব্রকলি |
খেজুর | কুমড়ার বীজ |
ডুমুর | বিট |
বাদাম | মাশরুম |
আয়রন সমৃদ্ধ মাছের তালিকা :
ইলিশ মাছ | স্যামন মাছ |
শিং মাছ | টুনা মাছ |
রুই মাছ | সামুদ্রিক খাবারের মধ্যে রয়েছে |
কাতলা মাছ | চিংড়ি |
ট্যাংরা মাছ | ভেটকি মাছ |
পুঁটি মাছ | কাটলফিশ |
আইড় মাছ | রুপচাঁদা |
আইড় মাছ | শামুক ও ঝিনুক |
মাগুর মাছ |
আয়রণ সমৃদ্ধ অন্যান্য আমিষ ও নিরামিষ খাবার হলো
গরু, খাসি | মুরগির কলিজা |
চিয়া বীজ | তিলের বীজ |
মটরশুঁটি | ওটমিল |
মসুর ও মুগ ডাল | কাজু বাদাম |
ব্রাউন রাইস ও | ফর্টিফাইড সিরিয়াল |
আয়রনের অভাবজনিত রোগ
অ্যানিমিয়া– আয়রনের অভাবজনিত প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে অ্যানিমিয়া। যখন শরীর স্বাভাবিক কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে ব্যার্থ হয় তখন এই সমস্যা দেখা দেয়। কারণ তখন পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিনের অভাবে হার্ট ও শরীরের সঠিকভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারেনা। ফলসরূপ দুর্বলতা, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এবং মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।
ওইক ইমিউন সিস্টেম : আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থ্যাৎ ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হতে থাকে এক পর্যায়ে ব্যাক্তির দ্রুত সংক্রমণ ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মস্তিষ্কের বিকাশে সমস্যা: বাচ্চাদের ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মকভাবে দেখা দেয়। গর্ভে থাকা অবস্থায় বাচ্চা মা যদি আয়রনের অভাবে ভোগে ও জন্মের পরও বাচ্চার একই অবস্থা হয় তাহলে বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ ও শেখার ক্ষমতা ব্যাহত হয়।
মানবদেহে আয়রনের ঘাটতির লক্ষণ সমূহ
মানবদেহে আয়রনের ঘাটতি হলে নিম্নলিখিত লক্ষণ সমূহ দেখা যায় :
- শারীরিক নিশক্তি বোধ করা
- মাথা ঘোরানো ও ব্যাথা করা
- কাজ কর্মে মনোযোগ কমে যাওয়া
- স্বরণশক্তি দুর্বল হওয়া
- হাত-পা ও শরীরের মাংশে ব্যাথা
- চুল পড়া
- বুক ভারি লাগা বা ধরফর করা
- স্থূলতা বৃদ্ধি পাওয়া
- হাত-পা শিরশির করা
- হাত-পা চিবানো
- হাত-পা নিস্তেজ হয়ে আসা
- গলার মধ্যে কিছু আটকে আছে মনে হওয়া
- খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া
- হাত-পায়ের নখ বেঁকে যাওয়া
মানবদেহে আয়রনের দৈনিক চাহিদ কতটুকু?
যেহেতু আমদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন তাই মানবদেহে আয়রনের দৈনিক চাহিদা সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। নিচের টেবিলে আয়রনের দৈনিক চাহিদা বয়স অনুসারে দেওয়া হলো :
আয়রনের দৈনিক চাহিদা
বয়সের ধরণ | পরিমাণ |
শিশু ও কিশোর | ৭-১৫ মি.গ্রা |
পুরুষ (প্রাপ্তবয়স্ক) | ৮ মি.গ্রা |
মহিলা (প্রাপ্তবয়স্ক) | ১৮ মি.গ্রা |
দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেসকল খাবার খেয়ে থাকি এসব খাবারে থাকা আয়রনের পরিমাণ জানা থাকলে দৈনিক আয়রনের চাহিদা নিশ্চিত করা যায়। নিচে আমাদের দৈনিক খাবার ও এতে থাকা আয়রনের পরিমাণ দেয়া হলো :
খাবারের নাম | প্রতি ১০০ গ্রামে আয়রনের পরিমাণ |
পালং শাক | ২.৭ মি.গ্রা |
লাল মাংস | ২.৬ মি.গ্রা |
মুরগির মাংস | ১.৩ মি.গ্রা |
ডাল | ৩.৩ মি.গ্রা |
টোফু | ৫.৪ মি.গ্রা |
কাজু বাদাম | ৬.৭ মি.গ্রা |
গরুর লিভার | ৬.২ মি.গ্রা |
কুমড়ার বীজ | ৮.৮ মি.গ্রা |
বাচ্চাদের জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা (Iron Rich Foods for Infants)
বাচ্চাদের জন্য এমন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার নির্বাচন করতে গেলে এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে যা সহজপাচ্য এবং তাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী। নিচে বাচ্চাদের জন্য উপযোগী এমন আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা দেয়া হলো।
ডিমের কুসুম | কিশমিশ ও শুকনো ফল |
মুরগির ব্রেস্টের ছোট টুকরো | সবুজ শাক |
ডাল ও ডালজাত খাবার | বিন |
ফর্টিফাইড সিরিয়াল শিশুখাদ্য |