এস আলম গ্রুপের ছয় কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ

Posted by on in বাংলাদেশ 0
1st Image

চট্টগ্রামের বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের ছয়টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই কারখানাগুলোর সামনে বন্ধের নোটিশ টাঙানো হয়। নোটিশটি দেখে শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তবে পরিস্থিতি শান্ত করতে কর্তৃপক্ষ জানান, পরিস্থতি উন্নত হলে কারখানা পুনরায় চালু করা হবে।

এস আলম গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসনের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলেন , “কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী অনিবার্য কারণে আগামীকাল বুধবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানাগুলো বন্ধ থাকবে। তবে নিরাপত্তা, সরবরাহ, এবং জরুরি বিভাগ চালু থাকবে।”

বন্ধ কারখানাগুলোর তালিকা

বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো:

নং কারখানার নাম ঠিকানা

এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ

কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড–নফ
এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড
ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

 

এই কারখানাগুলোর মধ্যে দুটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কালারপুল এলাকায়, তিনটি ইছানগরে, এবং একটি বাঁশখালীতে অবস্থিত।

শ্রমিকদের বিক্ষোভ

আজ দুপুর তিনটার দিকে কালারপুল এলাকায় এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক শ্রমিক নোটিশে আকস্মিক কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শ্রমিকরা জানান, এই সিদ্ধান্ত তাদের পরিবার-পরিজনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে।

এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের নিরাপত্তা পরিদর্শক মোহাম্মদ ইউনুস জানান, ভেতরে কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই। তবে কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দীন জানান, “সব কিছু স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে সাধারণ ছুটির নোটিশ দেওয়া হলো। এর কারণ আমরা জানি না।”

ব্যাংক সহযোগিতার ঘাটতি

এস আলম গ্রুপের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ব্যাংকের সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে কাঁচামাল আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। কাঁচামাল আমদানি করতে না পারলে কারখানাগুলো চালু রাখা সম্ভব নয়। এই ছয় কারখানায় প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন।

ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর পেছনের প্রেক্ষাপট

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানের দখল নেয়।

সম্প্রতি, বাংলাদেশ ব্যাংক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলমের নিয়ন্ত্রণ থেকে এসব ব্যাংক মুক্ত করে। ব্যাংকের অনিয়ম এবং অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদনে উঠে আসে যে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তাঁর সহযোগীরা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন।

এস আলম গ্রুপের কারখানা বন্ধের এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় শ্রমিক ও অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল এখন গভীর উদ্বেগে রয়েছে।