সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা: বেতন বাড়ছে সর্বনিম্ন ৪০০০ টাকা
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা এবারই প্রথমবারের মতো গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে পেছনের গ্রেডে থাকা কর্মচারীরা তুলনামূলক বেশি হারে ভাতা পাবেন, আর সামনের গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য ভাতার হার হবে কম। অর্থাৎ, কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ মহার্ঘ ভাতা কর্মকর্তাদের তুলনায় বেশি।
মহার্ঘ ভাতার হার নির্ধারণ
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, গ্রেডভেদে মহার্ঘ ভাতার হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবটি প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের অপেক্ষায়।
১ থেকে ৩ নম্বর গ্রেড | মূল বেতনের ১০ শতাংশ |
৪ থেকে ১০ নম্বর গ্রেড | মূল বেতনের ২০ শতাংশ |
১১ থেকে ২০ নম্বর গ্রেড | মূল বেতনের ২৫ শতাংশ |
এতে সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, স্কেলের পার্থক্যের কারণেও কেউ ৪ হাজার টাকার কম মহার্ঘ ভাতা পাবেন না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হওয়ার পর আগের সরকারের দেওয়া ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা বাতিল করা হবে। তবে পেনশনে থাকা কর্মকর্তারাও এই মহার্ঘ ভাতা পাবেন।
বর্ধিত ব্যয় মেটানোর উৎস ও বাজেটের সামঞ্জস্যতা
মহার্ঘ ভাতার ব্যয় মেটাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বাড়তি অর্থের উৎস উল্লেখ করতে হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজস্ব খাতে ব্যয় কমানো কঠিন হওয়ায় উন্নয়ন বাজেট থেকে ব্যয় সমন্বয় করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গেই মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হতে পারে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। তবে মহার্ঘ ভাতার জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই খরচ পরিচালন বাজেটের অন্যান্য খাত থেকে সমন্বয় করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান জানিয়েছেন, এই অর্থবছরেই মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, "আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা হবে। তবে কত শতাংশ হারে তা নির্ধারণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।" তিনি আরও জানান, মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত দুটি সভা ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পেনশনে থাকা ব্যক্তিরাও এই সুবিধার আওতায় আসবেন। ইনক্রিমেন্টের সময় মহার্ঘ ভাতার পরিমাণ বেসিকের সঙ্গে যোগ হবে।
মহার্ঘ ভাতার পটভূমি
সরকারি চাকরিজীবীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে মহার্ঘ ভাতা চালু করা। ২০১৫ সালে সর্বশেষ পে-স্কেল ঘোষণা করা হলেও এরপর কোনো নতুন পে-স্কেল দেওয়া হয়নি। মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে এবং চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে মহার্ঘ ভাতা প্রস্তাব করা হয়।
অর্থ বিভাগের একটি কমিটি মহার্ঘ ভাতার সম্ভাব্যতা এবং প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা করে সুপারিশ করেছে। কমিটির কার্যপরিধি ছিল, মহার্ঘ ভাতা প্রদান উপযোগিতা বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা চালুর এই উদ্যোগ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। যদিও এই সিদ্ধান্তে বাজেটের চাপ বৃদ্ধি পাবে, তবে এটি কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বয়ে একটি কার্যকর বাস্তবায়ন জাতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।