লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানল: বর্তমান পরিস্থিতির আপডেট খবর
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। প্রবল বাতাস এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এই আগুন বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। আগুনে ইতোমধ্যেই প্রায় ৩৪ হাজার একর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ১১ জন, আর হাজার হাজার মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা জানিয়েছেন, দাবানলে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। শহরের প্যালিসেইডস, কেনেথ, হার্স্ট এবং ইটন এলাকার মতো জায়গাগুলোতে দাবানল সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্যালিসেইডস এলাকায় অন্তত ৫ হাজার ৩০০ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
দাবানলে পুড়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনা। মার্কিন আবহাওয়া সংস্থা একিউওয়েদারের তথ্য অনুযায়ী, এই দাবানলের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১৫ হাজার কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকার সমান।
জলবায়ু পরিবর্তন ও দাবানলের কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল মূলত শুষ্ক আবহাওয়া এবং প্রবল সান্তা আনা বাতাসের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সান্তা আনা বাতাস মরুভূমি থেকে ঘণ্টায় ৯৭ কিলোমিটার গতিতে উপকূলীয় এলাকায় প্রবাহিত হয়, যা দাবানল আরও ভয়াবহ করে তোলে। গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
২০২৪ সালের এল নিনোর সঙ্গে যুক্ত অতিবৃষ্টির পর শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ক্যালিফোর্নিয়ায় গাছপালার জ্বালানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশবিদরা এই পরিস্থিতিকে "হাইড্রোক্লাইমেট হুইপল্যাশ" বলে অভিহিত করেছেন, যা দাবানল ছড়িয়ে পড়ার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
তারকাদের ক্ষয়ক্ষতি
এই দাবানলে হলিউডের বহু তারকার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। অস্কার জয়ী অভিনেতা মেল গিবসন, প্যারিস হিলটন, জেমি লি কার্টিস, মাইকেল কিটন, এবং ব্র্যাডলি কুপারের মতো তারকাদের বাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। মেল গিবসন বলেছেন, "আমার বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, তবে পরিবার নিরাপদে আছে।"
অভিনেত্রী ম্যান্ডি মুর তার সন্তান ও পোষা প্রাণীদের নিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আরেক তারকা রেইন উইলসন তার পুড়ে যাওয়া বাড়ির ছবি শেয়ার করে বলেছেন, "এই ঘটনা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।"
সরকারি পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে দমকলকর্মী এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে সক্ষম উড়োজাহাজ আনা হয়েছে। এমনকি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ফায়ার সার্ভিসের ২৫০ জন কর্মী ও আগুন নেভানোর সরঞ্জাম পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
মানুষের দুর্ভোগ ও মানবিক সহায়তা
প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, "আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।" এই পরিস্থিতিতে হলিউডের তারকা জেমি লি কার্টিস ত্রাণ কার্যক্রমে ১০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন।
স্পেনের বংশোদ্ভূত শেফ হোসে আন্দ্রেস তার খাবারের ট্রাক বসিয়ে দুর্গতদের বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করছেন। তিনি বলেছেন, "এই মুহূর্তে ধনী-গরিব সবারই সহানুভূতি প্রয়োজন।"
লস অ্যাঞ্জেলেসের এই দাবানল শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়; এটি জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবের একটি উদাহরণ। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এমন বিপর্যয় আরও বাড়বে। মানুষের সচেতনতা, সরকারের উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা একসঙ্গে কাজ করলে ভবিষ্যতে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।