Home বাংলাদেশ অপরাধ ডিবি পরিচয়ে ঢাকায় ডাকাতি: ১২ গ্রেপ্তার, উদ্ধার ১৯০০ কেজি তেল

ডিবি পরিচয়ে ঢাকায় ডাকাতি: ১২ গ্রেপ্তার, উদ্ধার ১৯০০ কেজি তেল

Posted by on in বাংলাদেশ 0

ঢাকার ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিচয়ে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত চলা এক অভিযানে তাদের আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কেজি সয়াবিন তেল, পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া দুটি ট্রাক এবং একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (আজ) মিন্টো রোডে অবস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ডাকাতরা চট্টগ্রাম থেকে উত্তরবঙ্গগামী সয়াবিন তেলবোঝাই ট্রাক দুটি রাজধানীতে এনে ডাকাতি করে, পরে সেগুলো বিক্রি করে ফেলে।

পুলিশ জানায়, গত ২ জানুয়ারি ও ২২ জানুয়ারি ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় দুটো পৃথক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। একটি ট্রাকে ৭৫ ড্রাম এবং অন্যটিতে ৬০ ড্রাম সয়াবিন তেল ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়—দুটি ঘটনায় একই রকম পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়েছে। সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করে ট্রাকের গতিরোধ করা হয়, এরপর ডিবি সদস্য পরিচয়ে চালকদের জিম্মি করে ডাকাতি করা হয়। এ সময় তাদের কাছে ওয়াকিটকি ও লেজার লাইটও ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। উপকমিশনার মাসুদ আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, ডাকাতরা একটি ট্রাক মুন্সিগঞ্জ এলাকায় ও অন্য ট্রাক পূর্বাচলে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে চালকদের রাস্তায় ফেলে দেয়ার পর সয়াবিন তেলের ড্রামগুলো মাত্র ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে, যার প্রকৃত মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এই সমস্ত লেনদেনের মূল পরিকল্পনা ও কার্যক্রমে জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরে এমন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল বলে পুলিশের ধারণা।

ধানমন্ডি থানার বরাতে জানা যায়, মো. জাকির ওরফে তৌহিদ এই ডাকাতদলের নেতৃত্ব দেয়। তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আরেকজন, মো. বেলাল চাকলাদার, মতিঝিলের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি। তার বিরুদ্ধেও যাত্রাবাড়ী থানায় একটি এবং উত্তরা পশ্চিম থানায় আরেকটি হত্যা মামলার তথ্য রয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতির সাথে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া অন্য ১০ জনের বিরুদ্ধেও দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা হলেন—মো. মঞ্জু (৪০), সাইফুল ইসলাম (৪০), মো. রাসেল (২৮), মো. জাহিদ (২৪), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৩), মো. হিরা শেখ (৩৫), মো. রফিক (৩৫), মো. বাঁধন (৩০), চাঁন মিয়া (৫৪) ও মো. আসলাম খান (৪৫)। পুলিশ জানায়, তাদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলছে।

রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ডিবি পরিচয়ে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বড় ধরনের একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে। নেতৃত্ব পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং রাজনীতির আড়ালেও নিজেদের সক্রিয় রেখেছিল। সয়াবিন তেল ছিনিয়ে নিয়ে তা কম মূল্যে বিক্রি করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ তৎপরতাও তারা চালিয়ে আসছিল। পুলিশের অভিযান ও তদন্তের মাধ্যমে এখন এসব অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আশা করা যায়, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের থেকে পাওয়া তথ্যে পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।