রাজধানীতে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেল আবারও শুরু হয়েছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য বড় সহায়ক হয়ে উঠেছে। সোমবার দুপুর ১২টায় সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে টিসিবির পণ্যবোঝাই ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
ন্যায্য দামে পণ্য নিতে মানুষের হুড়োহুড়ি
টিসিবির ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষ হুড়োহুড়ি করে লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই শত শত মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে যান। যদিও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, তবে বাস্তবে দেখা যায়, মধ্যবিত্ত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাও এ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। কারণ, টিসিবির পণ্য কিনলে একজন ভোক্তা বাজারের তুলনায় প্রায় ৪০০ টাকা সাশ্রয় করতে পারেন।
পুনরায় চালু হলো ট্রাকসেল কার্যক্রম
প্রায় ১ মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় শুরু হলো টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। বাজারের ঊর্ধ্বগতির কারণে এখন শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্তরাও টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
রমজান মাসকে সামনে রেখে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে নারী, পুরুষ ও কিশোরদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে প্রথমবারের মতো এই কার্যক্রমের মাধ্যমে পণ্য সংগ্রহ করছেন।
কেন টিসিবির পণ্যের এত চাহিদা?
টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা পণ্য সাধারণ বাজারের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। উদাহরণস্বরূপ:
পণ্য | দাম |
---|---|
ভোজ্যতেল (প্রতি লিটার) | ১০০ টাকা (বাজারে ১৯০ টাকা) |
মসুর ডাল (প্রতি কেজি) | ৬০ টাকা |
চিনি (প্রতি কেজি) | ৭০ টাকা |
ছোলা (প্রতি কেজি) | ৬০ টাকা |
খেজুর (অর্ধ কেজি) | ১৫৫ টাকা |
ভোক্তা সর্বোচ্চ ৫৮৮ টাকার মধ্যে প্রয়োজনীয় সব পণ্য কিনতে পারেন, যা সাধারণ বাজারের তুলনায় বেশ সাশ্রয়ী।
অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেছেন যে, এক পরিবার থেকে একাধিক সদস্য লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিচ্ছেন, ফলে প্রকৃত নিম্নবিত্তরা পণ্য পাচ্ছেন না। নার্গিস আক্তার নামে এক ক্রেতা জানান, "আমরা অনেক কষ্ট করে লাইনে দাঁড়াই, কিন্তু অনেকেই পরিবারের চার-পাঁচজন নিয়ে এসে একসঙ্গে পণ্য কিনে নেয়। এতে প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হয়।"
আরেকটি বড় সমস্যা হলো ডিলারদের অনিয়ম। অনেক দোকানদার টিসিবির কম দামের পণ্য কিনে আবার দোকানে চড়া দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা শহরের ৫০টি পয়েন্টে ট্রাকসেল কার্যক্রম চলছে, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। মহাখালী, প্রেস ক্লাব, যাত্রাবাড়ীসহ বেশ কিছু এলাকায় ট্রাক না আসায় স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা দেখা গেছে।
চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে এবং ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও ট্রাকসেল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে ও রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে এ কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন ট্রাকসেল কার্যক্রম চলবে। গত বছর ২৪ অক্টোবর শুরু হওয়া ট্রাকসেল কার্যক্রম ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানোর পরিকল্পনা ছিল, তবে বাজার পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তা পুনরায় চালু করা হয়েছে।
টিসিবির পণ্য কেনার সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
সুবিধা:
- বাজারের তুলনায় কম দামে প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায়।
- মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য বড় সহায়তা।
- রমজানের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।
চ্যালেঞ্জ:
- পরিবারের একাধিক সদস্য লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য সংগ্রহ করায় প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত।
- কিছু অসাধু দোকানদার কম দামে পণ্য কিনে বেশি দামে পুনরায় বিক্রি করছেন।
- ট্রাকসেল পয়েন্ট পর্যাপ্ত না হওয়ায় অনেকেই সুবিধা পাচ্ছেন না।
টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম সাধারণ মানুষের জন্য বড় সহায়তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারের ঊর্ধ্বগতির কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই এখন এই ট্রাক থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও এটি নিম্নবিত্তদের জন্য চালু করা হয়েছিল, তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি এখন সর্বস্তরের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রকৃত অভাবী মানুষদের কাছে এই সুবিধা পৌঁছে দেওয়া গেলে এটি আরও কার্যকরী হয়ে উঠবে।