বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিকা পারভীন পপি হঠাৎ করেই আবার আলোচনার কেন্দ্রে। তবে এবার কারণ তার অভিনয় নয়, বরং নিজের পরিবারকে ঘিরে তৈরি হওয়া এক বিতর্ক। পারিবারিক সম্পত্তি ও আর্থিক লেনদেন নিয়ে দেখা দেওয়া এই বিরোধ শেষ পর্যন্ত খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত গড়িয়েছে, যা করেছেন পপির ছোট বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালি।
এক সময় মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা পপি তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ঢাকায় নিজের অবস্থান তৈরি করেন। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় অভিনয়ে যাত্রা শুরু করে, দুই দশকের বেশি সময় তিনি চলচ্চিত্র জগতে রাজত্ব করেন। তার সময়ে অনেক অভিনেত্রী আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও, পপি নিজের সঞ্চয় নিয়ে কখনো সচেতন ছিলেন না। ঢাকায় পরিবারসহ বসবাস, সংসারের যাবতীয় ব্যয় বহন—সবকিছুতেই তিনি ছিলেন পরিবারের ভরসা। তবে হঠাৎ করেই একদিন জানতে পারেন, তার বাবার সঙ্গে থাকা যৌথ ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে অন্য একাউন্টে। পপি কাঁদতে কাঁদতে বলেন: “আমি সারাজীবন পরিবারের জন্য সব করেছি, অথচ তারাই আমার অর্থ সরিয়ে নিলো। আমি কৈফিয়ত চাইলে, উল্টো আমাকে শত্রু বানিয়ে দিলো!” তার দাবি, মা-বাবা এবং ভাই-বোন মিলে তার সঞ্চিত অর্থ অন্য কারও একাউন্টে স্থানান্তর করেছেন। পরিবারের প্রতি নিজের ভালোবাসার বিনিময়ে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন।
এদিকে পপির মা মরিয়ম বেগম বলেন, “পপি আমাদের একমাত্র সন্তান নয়, আরও পাঁচ সন্তান আছে। কিন্তু তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। অথচ সে এখন আমাদের অসম্মান করছে!” তিনি বলেন, পপিকে বড় করতে পরিবার অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। পপি তার বাবার ১১ কাঠা সম্পত্তির ৬ কাঠা নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে। পরিবার চায় সব সন্তান যেন সমান ভাগ পায়।
পপির বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালির দাবি, পপি ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে এই সম্পত্তি লিখিয়ে নিলেও, তার লেনদেনের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, “আমাদের বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী, আমাদের সোনাডাঙ্গার জমি ও ঢাকার সম্পত্তি আমাদের সবার অধিকার। পপি সব কিছু একা দখল করতে চায়।”
পপির দাবি অনুযায়ী, তিনি নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে সম্পত্তি কিনেছেন। আর পরিবারের অভিযোগ, তিনি জোরপূর্বক বাবার সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়েছেন। পপি দলিল ও ব্যাংকের প্রমাণপত্র দেখিয়ে বলেন, তিনি জোর করে কিছুই নেননি, বরং সম্পত্তি কেনার পরও তার আয় পরিবার ব্যবহার করেছে। তার বিরুদ্ধে এখন পরিবারের পক্ষ থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
আইনি পদক্ষেপ নাকি সমাধানের পথ?
পপির মা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “যদি পপি আমাদের স্বামীর জমি দখল করে, তাহলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।” পপি পাল্টা জবাবে বলেন, “আমি চাই, মা-বাবা ও ভাই-বোনেরা সুখে থাকুক। তবে আমার সম্পত্তি নিয়ে কেউ টানাটানি করলে, আমি ছাড় দেবো না!” বর্তমানে দুই পক্ষই নিজের অবস্থানে অনড় থাকায়, এই পারিবারিক বিরোধ সমাধানের কোনো সহজ উপায় দেখা যাচ্ছে না।