Home অর্থনীতি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে বড় ধস: ৬ মাসে কমেছে ৭১ শতাংশ

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে বড় ধস: ৬ মাসে কমেছে ৭১ শতাংশ

Posted by on in অর্থনীতি 0
1st Image

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে (FDI) ব্যাপক পতন লক্ষ্য করা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই সময়ে বিনিয়োগ প্রায় ৭১% হ্রাস পেয়েছে।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী,  ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ২১.৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭৪.৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ প্রায় চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের ঘাটতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিদেশি বিনিয়োগ কমার অন্যতম কারণ।

প্রধান কারণ ব্যাখ্যা
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ব্যবসা সহজীকরণে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে।
বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কম দেশে বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাব রয়েছে।
দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার ঘাটতি টেকসই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনি ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "যেসব বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে ইতিমধ্যে বিনিয়োগ করেছে, তারা নতুন বিনিয়োগ না করে শুধু আগের লাভের কিছু অংশ পুনর্বিনিয়োগ করছে। যেখানে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭%, সেখানে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আসা কঠিন।" 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০-২০২৪ সাল পর্যন্ত গড়ে বছরে ১৫০ কোটি ডলারের মতো বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে।

বছর মোট বিদেশি বিনিয়োগ (কোটি ডলার) নতুন ইকুইটি বিনিয়োগ (কোটি ডলার)
২০২০ ১৪৮ ৬৫.৫
২০২১ ১৫২ ৬৭.২
২০২২ ১৫৫ ৬৮.০
২০২৩ ১৪৫ ৬৬.৮
২০২৪ (প্রথম ৬ মাস) ২১.৩ অপ্রকাশিত

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিনিয়োগের ধস নেমেছে।

প্রান্তিক বিনিয়োগের পরিমাণ (কোটি ডলার)
জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৫.০
অক্টোবর-ডিসেম্বর ৭.০

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে আসা FDI-এর বড় অংশই পুনর্বিনিয়োগ। নতুন বিনিয়োগের প্রবাহ খুবই কম, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য উদ্বেগজনক।

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে:

  1. নিয়মতান্ত্রিক ব্যবসা পরিবেশ সৃষ্টি: বিনিয়োগ বান্ধব নীতিমালা নিশ্চিত করতে হবে।
  2. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে একটি সুসংহত রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন।
  3. দুর্নীতি রোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।
  4. উন্নত অবকাঠামো ও সহজ অর্থায়ন: বড় প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিদেশি বিনিয়োগের এই ধস বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদি বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করা না হয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে বিদেশি বিনিয়োগের বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।