অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ছয় মাসকে ‘প্রথম পর্ব’ হিসেবে অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ সময়কালে সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে এবং আজ থেকে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, আমাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে, তবে আমরা একত্রিত হয়ে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ আমাদের হাতে রয়েছে, এবং আমরা সেই সুযোগ ছড়িয়ে দিতে চাই না।
শনিবার, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সংলাপের উদ্বোধনী বক্তব্যে এই কথা বলেন তিনি। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিশনগুলো সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করেছে, এবং তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রতিবেদন অনুযায়ী এগুলো বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কমিশনগুলো নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে, যা বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে, তিনি উল্লেখ করেন যে, কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না, এবং সবার মধ্যে সমঝোতা গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, "আমরা যদি প্রথম অধ্যায়ে যেভাবে কাজ করেছি, ঠিক তেমনভাবেই দ্বিতীয় পর্বে সফল হতে পারলে, তৃতীয় পর্বে আমাদের আর কোনো চিন্তা থাকবে না। আমাদের কাজের ফলস্বরূপ নতুন বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো।" অধ্যাপক ইউনূস ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, "আমাদের লক্ষ্য এমন একটি দেশ গড়ে তোলা, যা সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হবে। আমাদের আইনি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে সুদৃঢ় করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।" তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে যে স্বৈরাচারী কাঠামো ছিল, তা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।"
প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আমরা আমাদের দেশটিকে তামাশায় পরিণত করেছি, যেখানে আইন ও নিয়মের কোনো মূল্য নেই। এসব সংস্কার করতে হবে এবং নতুন বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।" তিনি আরও বলেন, "ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা কমিশন তৈরি করার মাধ্যমে আমরা একটি ঐকমত্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি, যাতে ভবিষ্যতে কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়।" ড. ইউনূস দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকারের সমর্থন বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "বিশ্বব্যাপী আমাদের সমর্থন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার কারণে আমাদের বিরোধী পক্ষ ব্যাহত হচ্ছে।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, "জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের পক্ষে একটি বড় শক্তি হিসেবে কাজ করছে।"
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "নতুন বাংলাদেশ গঠনে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন হবে, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না।" তিনি রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, "দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে গেছে। এখন আপনাদের কাজ হল দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া এবং এগিয়ে যাওয়া। যদি আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করি, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।"