নিচের যে অংশটি সম্পর্কে জানতে চান, ক্লিক করুন
- ভিটামিন সি (Vitamin C) কী?
- ভিটামিন সি এর প্রকারভেদ কি কি?
- অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic Acid) কি?
- ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Dehydroascorbic Acid) বা DHA কি?
- মানবদেহে ভিটামিন সি এর কাজ কি?
- দৈনিক শরীরে কী পরিমাণ ভিটামিন সি দরকার?
- আমাদের শরীরে ভিটামিন সি-এর যত উপকারিতা (Vitamin c benefits)
- ভিটামিন সি ঘাটতির লক্ষণ সমূহ কি কি?
- স্কার্ভি (Scurvy) রোগ কেন হয়?
- ভিটামিন সি (Vitamin c vitamins)জাতীয় খাবার কি কি?
- প্রাকৃতিক ভিটামিন সি (Natural Vitamin C) সমৃদ্ধ খাবার সমূহ
- ভিটামিন সি এর সাপ্লিমেন্ট (vitamin c supplement) এবং ট্যাবলেটস (vitamin c tablets)
- অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণে পার্শপ্রতিক্রিয়া
ভিটামিন সি (Vitamin C) কী?
ভিটামিন সি হলো পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যা শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এটি পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন শরীরে শোষিত হওয়ার পর অবশিষ্ট পরিমাণ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। শরীরে ভিটামিন সি এর খুব ছোট রিজার্ভ বা সঞ্চয় থাকে ফলে এই ভিটামিন নিয়মিত গ্রহণ করতে হয়।
ভিটামিন সি এর প্রকারভেদ কি কি?
ভিটামিন সি দুটি প্রধান রূপে বিভক্ত-
১) অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic Acid)
২) ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Dehydroascorbic Acid)
অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic Acid) কি?
এটি ভিটামিন ‘সি’ এর সক্রিয় রুপ। ফলে শরীরে সহজে শোষিত হয় এবং সরাসরি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অ্যাসকরবিক অ্যাসিড মানবদেহে উৎপন্ন হয় না বলে এটি অবশ্যই খাবার অথবা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করতে হয়। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার অর্থ এটি অক্সিডেশন প্রক্রিয়া থেকে কোষগুলিকে রক্ষা করে। অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের রাসায়নিক সংকেত হলো C₆H₈O₆
ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Dehydroascorbic Acid) বা DHA কি?
এটি মূলত অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের অক্সিডাইজড রূপ যা শরীরের কোষে প্রবেশ করে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যখন দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু হারায়, তখন এটি ডিহাইড্রোয়াসকরবিক অ্যাসিড (ডিএইচএ) গঠনের জন্য জারিত হয়। ডিহাইড্রোয়াসকরবিক অ্যাসিডের রাসায়নিক সংকেত হলো C₆H₆O₆।
মানবদেহে ভিটামিন সি এর কাজ কি?
ভিটামিন সি স্বাস্থ্যর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর উপাদান যা মানুষের হাড়, তরুণাস্থি, ত্বক এবং রক্তনালী গঠন ও বজায় রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি মানুষর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে ইমিউন সিস্টেমকেও সচল রাখে। ভিটামিন সি প্রধানত মানবদেহের সমস্ত অংশে টিস্যু বৃদ্ধি এবং মেরামতে কাজ করে থাকে।
এর পাশাপাশি এটি,
- প্রোটিন গঠন করে
- দেহে টেন্ডন, লিগামেন্ট এবং রক্তনালী তৈরিতে সাহায্যে করে
- টিস্যু তৈরির মাধ্যমে ক্ষত নিরাময় করে
- হাড় ও দাঁত মেরামত সহ আয়রন শোষনে সাহায্যে করে
দৈনিক শরীরে কী পরিমাণ ভিটামিন সি দরকার?
বয়সভেদে ভিটামিন ‘সি’গ্রহণের মাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে মি.গ্রা হিসেবে ভিটামিন সি গ্রহণের মাত্রা দেয়া হলো –
বয়স | পরিমাণ (আরডিএ মি.গ্রা) |
০-৬ মাস | ৪০ |
৭-১২ মাস | ৫০ |
১-৩ বছর | ১৫ |
৪-৮ বছর | ২৫ |
৯-১৩ বছর | ৪৫ |
১৪-১৮ বছর | ৭৫ |
১৯ বছর+ (ছেলে) | ৯০ |
১৯ বছর+ (মেয়ে) | ৭৫ |
আমাদের শরীরে ভিটামিন সি-এর যত উপকারিতা (Vitamin c benefits)
শরীরে ভিটামিন ‘সি’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত পরিমিত ভিটামিন ‘সি’ গ্রহণ করা একটি সুস্থ্য শরীরের জন্য কাম্য। মানব শরীর ভিটামিন সি তৈরি করতে পারেনা। আবার অন্যদিকে এটি পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সঞ্চয় করতে পারেনা। তাই দৈনিক খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমানে ভিটামিন সি থাকা অত্যাবশক। নিচে ভিটামিন সি শরীরে সেসব উপকার করে থাকে তা দেওয়া হলো-
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: এটি শরীরকে ক্ষতিকারক ফ্রি-রেডিক্যাল থেকে কোষকে রক্ষা করে।
- ইমিউন সিস্টেম: এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের ক্ষতসমূহ দ্রুত সারাতে সাহায্যে করে।
- কলাজেন উৎপাদন: কলাজেন শরীরের ত্বক, হাড়, এবং অন্যান্য টিস্যু গঠন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর ভিটামিন সি এই কলাজেন উৎপাদনে সাহায্যে করে।
- আয়রণ শোষণ: এটি উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত আয়রন শরীরে শোষণে সাহায্যে করে ফলে রক্ত শূন্যতা হ্রাস পায়।
- ইনসুলিনের কার্যকারিতা: ভিটামিন ‘সি’ শরীরে শর্করা জাতীয় খাবার থেকে প্রাপ্ত ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়বেটিসের ঝুকি কমে যায়।
ভিটামিন সি ঘাটতির লক্ষণ সমূহ কি কি?
ভিটামিন সি এর অভাবে শরীরে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমের সাথে সরাসরি জড়িত এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। এছাড়া নিচে ভিটামিন ‘সি’ ঘাটতির ফলে শরীরে দেখা দেয়া বিভিন্ন লক্ষণ সমূহ লেখা হলো।
- ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া : দেহে ভিটামিন ‘সি’ এর ঘাটতি হলে শরীরের অভ্যন্তরীন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলসরুপ নানান রোগ সহজেই আক্রান্ত করে।
- ত্বকের অস্বাভাবিকতা : ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবে ত্বকে ফাটল, অমসৃণ হয় এবং ক্ষত সারাতে দেরি হয়।
- আয়রন শোষণে সমস্যা : দেহে গ্রহণকৃত আয়রন কোষে শোষণে সমস্য হয়। এক পর্যায়ে চুল ও নখ দুর্বল হয়ে পড়ে।
- রক্তশূণ্যতা
- মাড়ি থেকে রক্তপাত
- নাক দিয়ে রক্ত পড়া
- শরীরের জয়েন্ট ফুলে ওঠা ও ব্যাথা করা
স্কার্ভি (Scurvy) রোগ কেন হয়?
দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন ‘সি’ এর অপর্যাপ্ততা থাকলে স্কার্ভি নামক রোগ হয়। এতে আক্রান্তদের ক্লান্তি, দুর্বলতা, ত্বকে লাল-নীল দাগ, মাড়ি থেকে রক্তপাতজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
ভিটামিন সি (Vitamin c vitamins)জাতীয় খাবার কি কি?
আমাদের খাবারে ভিটামিন সি থাকা অত্যাবশ্যক। তাই কোন কোন খাবারে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমানে রয়েছে তা জানা উচিত। প্রাকৃতিক ভিটামিন সি আমরা খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারি। এছাড়াও ভিটামিন সি এর সাপ্লিমেন্ট এবং ঔষধ গ্রহণের মাধমেও ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে।
প্রাকৃতিক ভিটামিন সি (Natural Vitamin C) সমৃদ্ধ খাবার সমূহ
প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন সি আমরা গ্রহণ করি খাবারের মাধ্যমে। বিশেষ করে কাঁচা শাকসবজিতে বেশি পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। নিচে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
ফলমূল – আম, পেঁপেঁ, আনারস, তরমুজ, স্ট্রবেরি, জাম, লিচু ও জাম্বুরা।
শাকসবজি – ফুলকপি, মটরশুটি, করলা, শসা, লেটুস, সবুজ ও লাল মরিচ, পালং শাক, বাঁধাকপি, শালগম শাক, সাদা আলু, মিষ্টি আলু, মটরশুটিঁ , লেটুস ইত্যাদি।
অন্যান্য – কাঁচা আদা, টক দই, কাঁচা হলুদ, পুদিনাপাতা বা পার্সলেপাতা
ভিটামিন সি এর সাপ্লিমেন্ট (vitamin c supplement) এবং ট্যাবলেটস (vitamin c tablets)
সাপ্লিমেন্ট হচ্ছে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান যা খাদ্যের পুষ্টির অভাব পূরণ করার জন্য বাইরে থেকে অ্যাড করা হয়। যদিও পর্যাপ্ত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলেই এর চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। তবে খাদ্যে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করতে সাপ্লিমেন্ট এবং ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শে। জনপ্রিয় ভিটামিন সি এর সাপ্লিমেন্ট এবং ঔষধের নাম হলো: সি ভিটা (c vita), cvitamin
এছাড়া ত্বকের যত্নেও ভিটামিন সি এর বেশ কিছু সিরাম রয়েছে এদের মধ্যে- Vitamin c serum for men, Plum vitamin c serum, Truskin vitamin c serum বেশ জনপ্রিয়।
অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণে পার্শপ্রতিক্রিয়া
অত্যাধিক পরিমানে ভিটামিন ‘সি’ গ্রহণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয় ঘটেছে এমন ঘটনা খুব বিরল। তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অত্যাধিক পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ গ্রহণে পেট খারাপ এবং ডায়রিয়া হতে পারে। কেউ কেউ একে কিডনিতে পাথরের জন্যও দায়ি করে থাকেন। যেহেতু মানব শরীর ভিটামিন ‘সি’ জমা রাখতে পারেনা তাই প্রয়োজন অতিরিক্ত ভিটামিন ‘সি’ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত গ্রহণে কারো কারো ক্ষেত্রে এই লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে।