প্রোটিন কী? প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা

By MD Alim

Updated on:

এই আর্টিকেলে আজ আমরা প্রোটিন কী, প্রোটিন জাতীয় খাবারের তালিকা, আমাদের দেহে প্রোটিনের কাজ, প্রোটিন অভাবে লক্ষণসমূহ ও প্রোটিন নিয়ে সতর্কতা ও নানান প্রশ্নের সম্পর্কে জানবো।

নিচের যে অংশটি সম্পর্কে জানতে চান, ক্লিক করুন

প্রোটিন কী?

প্রোটিন হলো অ্যামিনো এসিড দিয়ে তৈরি এক ধরণের জৈব-যৌগ যা মানবদেহে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি অ্যামিনো এসিডের (Amino Acids) ছোট ছোট ইউনিট দিয়ে তৈরি যা কোষের বিল্ডিং ব্লকস হিসেবে কাজ করে। অর্থ্যাৎ প্রোট্রিন শরীরের বিভিন্ন কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গ গঠনসহ শারীরবৃত্তীয় নানান প্রক্রিয়ায় কাজ করে।

প্রোটিন জাতীয় খাবারের তালিকা (High Protein Food List)

প্রোটিন একটি অপরিহার্য ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা পেশীর বিকাশ, টিস্যু মেরামত এবং এনজাইম এবং হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে। তাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরের জন্য দৈনিক পরিমিত পরিমানে থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে যারা পেশী/মাসেল গঠন, ওজন কমানো ও ডায়েট অনুসরণ করছেন। নিচে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ উদ্ভিদ ও প্রাণিজ খাবারের তালিকা দেয়া হলো।

উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাবার (High protein vegan foods)

উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাবারের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

  • ডাল এবং শিম জাতীয় খাবার: মসুর ডাল, মুগ ডাল, সয়াবিন ও চিঁড়া শিম প্রোটিনের ভালো উৎস। এগুলো অল্প দামে হাতের নাগালে সহজেই পাওয়া যায় ও সহজেই নানান রেসিপি তৈরি করে খাওয়া যায়।
  • বাদাম এবং বীজ: এ জাতীয় খাবারের মধ্যে চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাশু বাদাম ও সূর্যমুখী বীজ প্রোটিনের ভালো উৎস।
  • চিয়া সীড: স্ন্যাক্স হিসেবে চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।
  • তাহিনি: এটি তিলের বীজ থেকে তৈরি এক ধরণের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এটি সব অঞ্চলে পাওয়া না গেলেও তিলের বীজ থাকলে এটি তৈরি করা যায়।
  • বিভিন্ন শস্য: গম, বাদামি চাল, ওটস, বার্লি এবং এদের তৈরি নানান খাবার প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সরবরাহ করে থাকে।
উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ প্রাণিজ খাবার

নিচে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ প্রাণিজ খাবারের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

  • প্রাণিজ মাংস : গরু, খাসি, মুরগির ব্রেস্ট ও টার্কিতে অন্যান্য মাংসের তুলনায় উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে।
  • মাছ: স্যামন, টুনা, ইলিশ, কাতল ও গ্রাম্য প্রাকৃতিক খাল ও নদীর মাছ প্রোটিনের ভালো উৎস।
  • ডিম: যেকোন পাখিন ডিমের সাদা অংশ সাধারণত প্রোটিনে সমৃদ্ধ থাকে।
  • দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই, পনির ও ঘি হলো প্রোটিনের ভালো উৎস।
  • সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক সব মাছই প্রোটিন সমৃদ্ধ তবে এদের মধ্যে বড় চিংড়ি, কাঁকড়া সামুদ্রিক খাবার হিসেবে প্রোটিনের একটি ভালো উৎস।

নিচে উদ্ভিদ উৎস, প্রাণিজ উৎস ও প্রসেস ফুডের মধ্যে থাকা প্রোটিনের পরিমাণ দেয়া হলো।

প্রাণীজ খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ

খাবার নামপ্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিনের পরিমাণ
চিকেন ব্রেস্ট৩১ গ্রাম
গরুর মাংস২৬ গ্রাম
টুনা মাছ৩০ গ্রাম
স্যালমন মাছ২৫ গ্রাম
ডিম৬ গ্রাম
চিংড়ি২৪ গ্রাম
গরুর কলিজা২০ গ্রাম
গ্রিক দই১০ গ্রাম

উদ্ভিজ্জ খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ

খাবার নামপ্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিনের পরিমাণ
সয়াবিন৩৬ গ্রাম
মসুর ডাল৯ গ্রাম
কুইনোয়া১৪ গ্রাম
চিয়া বীজ১৭ গ্রাম
চিনাবাদাম২৫ গ্রাম
কাঠবাদাম ২১ গ্রাম
সবুজ সয়াবিন১১ গ্রাম
টফু৮ গ্রাম
পনির ২৫ গ্রাম

প্রসেস ফুডে থাকা প্রোটিনের পরিমাণ

খাবার নামপ্রতি৫০-৭০ গ্রামে প্রোটিনের পরিমাণ
প্রোটিন বার২০-২৫ গ্রাম
প্রোটিন শেক২০-২৫ গ্রাম

প্রোটিন ঘাটতির লক্ষণসমূহ কী কী?

শরীরে যদি কোনো কারণে প্রোটিনের অভাব হয়, সেক্ষেত্রে নিন্মোক্ত লক্ষণসমূহ দেখা দেয়:

  • হাত-পা এর পেশী দুর্বল বোধ করা
  • হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি পাওয়া
  • শক্তির অভাব ও ক্লান্তি বোধ করা
  • শুষ্ক, ফাটা, ফুসকুড়ি ও রুক্ষ ত্বক
  • চুল পড়া বৃদ্ধি পাওয়া
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
  • ওজন হ্রাস, পানিশূন্যতা ও এডিমা সমস্যা দেখা দেওয়া
  • ক্ষত সারতে দেরী হওয়া
  • মনোযোগের ঘাটতি ও কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া

খাবারের পাশাপাশি প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট (Protein Suppliments) এর ব্যবহার

বাজারে অনেক ধরণের প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট প্রচলিত রয়েছে। এগুলো সাধারণত খাবারের বিকল্প হিসেবে দ্রুত প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শারীরিক দুর্বলতা ও পেশী গঠনে উদ্দেশ্য গ্রহণ করা হয়। নিচে কতগুলো প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের ধরণ, উপকারিতা, ব্যবহার ও উপাদান সম্পর্কে বলা হলো।

B-Protein (বি-প্রোটিন)

শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন সরবরাহের জন্য B-protein একটি জনপ্রিয় প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট। এটি শারীরিক দুর্বলতা, পেশী গঠন ও শক্তি বর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
B-Protein এর উপাদান : বি-প্রোটিনে সাধারণত সোয়া প্রোটিন আইসোলেট, দুধ প্রোটিন, ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও ফ্যাট থাকে।
B-Protein এর ব্যবহার : বি-প্রোটিন সাধারণত দুধের সাথে মিশিয়ে অথবা পানিতে গুলিয়ে পান করা হয়।B-Protein এর উপকারিতা : এতে বিভিন্ন প্রকার প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল যা শরীরের হাড় ও পেশী গঠনে সহায়তা করে।

Whey Protein (ওয়েই প্রোটিন)

Whey Protein দুধ থেকে তৈরি জনপ্রিয় একটি প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট। বিশেষকের অ্যাথলেট ও বডিবিল্ডারদের মাঝে এটি ব্যপকভাবে জনপ্রিয়। পাউডার আকারে থাকে বিধায় এটি পানির সাথে মিশিয়ে স্মুদি বা শেক বানিয়ে পান করা যায়।

Whey Protein এর ধরণ :

  • Whey Protein Concentrate (WPC):- এতে প্রায় ৭০-৮০% প্রোটিন, কিছু পরিমাণ ল্যাকটোজ (দুধের চিনি) ও ফ্যাটও থাকে। স্বাদের দিক থেকে WPC জনপ্রিয় ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।
  • Whey Protein Isolate (WPI): এতে প্রায় ৯০% চেয়ে বেশি প্রোটিন থাকে। এটি প্রায়ই ল্যাকটোজ ও ফ্যাটমুক্ত হয়ে থাকে। ফলে যারা কম চর্বি ও ল্যাকটোজ চায় তাদের জন্য এটি উপযুক্ত।
  • Whey Protein Hydrolysate (WPH): এতে কিছুটা হাইড্রোলাইজড প্রোটিন থাকে যা শরীর সহজেই হজম ও শোষণ করতে পারে। ফলে স্পোর্টস ও মেডিক্যালে এটি প্রোটিন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Whey Protein এর ব্যহার : এটি পাউডার আকারে থাকায় ও সহজে হজম হওয়ায় মেডিক্যাল ক্ষেত্র থেকে শুরু করে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তাই সাধারণ ব্যবহারে এটি স্নাক্স হিসেবে বা কেউ চাইলে ওয়ার্ক আউটের পর প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে Whey Protein ব্যবহার করতে পারে।

Whey Protein এর উপকারিতা :-

  • পেশী গঠন : Whey Protein দেহে অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে দ্রুত পেশী পুনর্গঠনে সহায়তা করে। ফলে পেশী গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
  • ওজন কমানো: শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিন সরবারহ করে ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। ফলে দেহে কম ক্যালরি প্রবেশ করে। এতে করে ওজন কমে আসে।
  • ইমিউন সিস্টেম : এটি দেহে গ্লুটাথিওন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উৎপাদন করে যা দেহের ইমিউন সিস্টেমকে আরো শক্তিশালি করে।
  • দ্রুত কার্যকারীতা: Whey প্রোটিন খুব দ্রুত হজম হয় ফলে এটি শরীরকে দ্রুত পুষ্টি সরবরাহ করে কোষ গঠনে সহায়তা করে।
Soy Protein (সয়া প্রোটিন)

Soy Protein হলো উচ্চমানের উদ্ভিজ্জ প্রোটিন যা সয়াবিন থেকে তৈরি হয়। এটি নিরামিষভোজী বা ভেগান ডায়েট অনুসরণকারীদের জন্য আদর্শ প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট।

Soy protein এর ধরন:-

  • Soy Protein Concentrate (SPC): SPC তে প্রায় ৭০%-৯০% প্রোটিন, সামান্য ফ্যাট ও সামান্য কার্বোহাইড্রেট থাকে।
  • Soy Protein Isolate (SPI): SPI তে প্রায় ৯০% এর বেশি প্রোটিন থাকে।তবে এতে খুব কম ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট থাকে। এটি সয়াবিনের সবচেয়ে শুদ্ধ প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট।
  • Textured Soy Protein (TSP): TSP প্রোটিনযুক্ত সয়াবিন পণ্য যা মাংসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • Soy protein এর ব্যবহার: Textured soy protein ব্যাতিত বাকী গুলো স্মুদি বা শেক তৈরি করে পান করা যায়। তবে TSP মাংসের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন মাংসবিহীন খাবারে ব্যবহার করা যায়। কখনো এটি রান্না করা খাবারের প্রোটিন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়।

Soy protein এর উপকারিতা : এটি-

  • পেশী গঠনে সহায়তা করে
  • হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
  • হাড় মজবুত রাখে
  • হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে
প্রোটিন পাউডার (protein powder)

প্রোটিন পাউডার হলো জনপ্রিয় ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট। সাধারণত প্রোটিন পাউডার ওজন কমাতে এবং পেশীকে টোন করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এটি শরীরে হরমোন, এনজাইম এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান উৎপন্ন করতে সহায়তা করে।

সাপ্লিমেন্ট প্রোটিন গ্রহণে সতর্কতা (Precautions in Protein Intake)

কথায় আছে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। তবে কথাটি আরো গুরুতর হয়ে উঠে যখন এটি স্বাস্থ্য নিয়ে হয়ে থাকে। তাই প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত তা নিচে দেয়া হলো।

  • অতিরিক্ত পরিমানে প্রোটিন গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা
  • প্রাকৃতিক প্রোটিনের বিকল্প হিসেবে সাপ্লিমেন্ট সর্বদা গ্রহণ না করা
  • সঠিক ডোজ মেনে চলা
  • ল্যাকটোজ সংবেদনশীলতা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া
  • পুষ্টির ঘাটতি পূরণ ব্যাতিত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার না করা
  • লিভার বা কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা
  • স্বাস্থ্যর উপর নির্ভর করে প্রোটিনের উৎস যাচাই করে তারপর গ্রহণ করা
  • সর্বদা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া

Leave a Comment